বাংলাদেশে মোট ক্যান্সার আক্রান্তের ১৬ শতাংশই স্তন ক্যান্সারের রোগী। এর মধ্যে ১ শতাংশ পুরুষ রোগীও রয়েছেন। উপরন্তু বাংলাদেশে যত মানুষ ক্যান্সারে মারা যায় এর মধ্যে স্তন ক্যান্সারের রোগী দ্বিতীয় সর্বোচ্চে। ৫০ বছরের বেশি বয়সী মহিলাদের মধ্যে স্তন ক্যান্সারের প্রবণতা বেশি। কিন্তু অবিবাহিত মেয়েরাও এর ঝুঁকিমুক্ত নন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রাথমিকপর্যায়ে ক্যান্সার শনাক্ত হলে তা চিকিৎসার মাধ্যমে পুরোপুরি সারিয়ে তোলা সম্ভব। ক্যান্সার গবেষণায় বাংলাদেশের কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অথবা সরকারের নিজস্ব কোনো প্রতিষ্ঠান নেই। তবে ক্যান্সার গবেষকেরা বলছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিভিন্ন নির্ণায়কের ওপর ভিত্তি করে অনুমাননির্ভর এমন তথ্য দিলেও বাংলাদেশে স্তন ক্যান্সারের সংখ্যা এর চেয়ে মোটেও কম নয়। কাজী ইউনুস আলী মেডিক্যাল কলেজের অনকোলজির বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা: সৈয়দ
মোহাম্মদ আকরাম হোসেন জানিয়েছেন, স্তন ক্যান্সার বংশগত কারণে হতে পারে। নানীর অথবা মায়ের হলে মেয়ের এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ ছাড়া যারা বেশি স্থূলকায় এবং যারা বেশি চর্বি খেয়ে থাকেন, ধূমপান করেন, মদ্য পান করেন তাদের স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি। মহাখালীর জাতীয় ক্যান্সার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা: হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকীন জানান, স্তন ক্যান্সার বলতে মহিলা বোঝালেও পুরুষও এ থেকে মুক্ত নয়। তিনি জানান, এ পর্যন্ত স্তন ক্যান্সার আক্রান্ত কমপক্ষে ১২ জন পুরুষ রোগী তিনি চিকিৎসা করেছেন। অধ্যাপক আকরাম হোসেন জানান, কম বয়সী মেয়েদের মধ্যে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। ক্যান্সারের মধ্যে শুধু স্তন ক্যান্সার আক্রান্তরা প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্ত হলে ৯০ শতাংশকেই চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করে তোলা সম্ভব। ৪০ বছরের বেশি বয়সী মেয়েদের উচিত কমপক্ষে বছরে একবার মেমোগ্রাম করে জেনে নেয়া যে তাদের স্তন ক্যান্সার হয়েছে কি না। তিন বছর পর পর মেমোগ্রামের পরীক্ষাটা করতে হবে। স্তন ক্যান্সারে রেডিওথেরাপি, কেমোথেরাপি, হরমোন থেরাপি, এন্টিবডিথেরাপি দিয়ে চিকিৎসা করা যায়। বাংলাদেশে স্তন ক্যান্সারাক্রান্ত রোগীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, বাংলাদেশে এ সংক্রান্ত সব ধরনের উন্নত চিকিৎসা আছে, কারো বিদেশ যাওয়ার প্রয়োজন নেই। এ ব্যাপারে ডাধ হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন জানান, ব্রেস্ট সেলফ এক্সামিনেশন বা নিজের স্তন নিজেই পরীক্ষা করে মহিলারা প্রাথমিকভাবে নির্ণয় করে পরে চিকিৎসকের কাছে যেতে পারেন। বাথরুমে আয়নার সামনে গিয়ে এটা করতে পারেন। স্তনে কোনো চাকা পাওয়া গেলে অথবা কোথাও শক্ত কিছু মনে হলে তাকে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। ১৩ থেকে ৪৫ বছরের সব মেয়ে এটা করতে পারেন। তবে মাসিকের আগে ও পরে এটা করা যাবে না। কারণ মেয়েদের স্তন এমনিতেই কিছুটা শক্ত হয়ে থাকে। ডা: হাবিবুল্লাহ তালুকদার বলেন, ক্যান্সার ধরা পড়লেই পরদিন থেকে থেরাপি দিতে হবে অথবা অপারেশনে যেতে হবে এমন কোনো কথা নেই। রোগীদের অথবা অভিভাবকদের মনে রাখতে হবে অপারেশনে যাওয়ার আগে চিকিৎসক বায়োপসি করিয়েছেন কি না। বায়োপসিতেই ধরা পড়ে প্রকৃতপক্ষে ক্যান্সার হয়েছে কি না। স্তন ক্যান্সার সচেতনতা মাস : বাংলাদেশে অক্টোবর মাসে স্তন ক্যান্সার সচেতনতা পালন হয়ে আসছে। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে মাসটি পালন করা হয়। সিসিপিআর নামক সংগঠনটি আগামী ১০ অক্টোবর বাংলাদেশে স্তন ক্যান্সার সচেতনতা দিবস পালনের আহবান জানায়। এ উপলক্ষে সবাইকে গোলাপি রঙের ফিতা (রিবন) পড়ার আহবান জানিয়েছে সংগঠনটি।

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন