পাঠকের কাছে অনুরোধঃ এটা একটা শিক্ষনীয় ব্লগ।এই ব্লগ/ওয়েবকে চটি সাইট মনে করার কোন অবকাশ নাই। আমাদের প্রতিদিনের জীবনে আমরা যৌনতা সম্পর্কে কি এবং কতটুকুই বা জানি? পশ্চিমা দেশের ১৬-১৮ বছরের ছেলে-মেয়েরা যৌনতার ব্যাপারে যা জানে, আমাদের দেশে বিয়ের ১৫ বছর পরে ও আমরা তা জানতে পারিনা, বুঝতে পারিনা। তাই আমার এই প্রচেষ্ঠা। এই ব্লগের লেখা দিয়ে যদি কারো কোন উপকার হয়, তাহলেই আমার কষ্ট সার্থক হবে। পুনশ্চঃ ব্লগটি চালু রাখতে, ডোনেশন করুন।আপনার ছোট্ট একটু কমেন্ট আমাকে অনেক প্রেরনা দেবে।দয়া করে Facebook এ একটা Like দিন। সবাইকে ধন্যবাদ।

রবিবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০১১

ঋতুবন্ধ বয়সী মহিলার স্বস্তি

হরমোন থেরাপি


মহিলাদের ১২ থেকে ৪৫ বছর বয়স পর্যন্ত যে ঋতুপ্রক্রিয়া চলে তাকে মাসিক বা মেনস্ট্রুয়েশন বলে। সাধারণত ৪৫ বছর পর থেকে স্বাভাবিক নিয়মে মহিলাদের মাসিক বন্ধ হয়ে যায়, একে মেনোপজ বলে। অনেকের ক্ষেত্রে তা ৫৫ বছরের পরেও হতে পারে।
পোস্ট মেনোপজাল সিনড্রোম : সাধারণত মহিলাদের মাসিক বন্ধ হওয়ার পর থেকে কতগুলো শারীরিক ও মানসিক সমস্যা দেখা দেয়, একে পোস্ট মেনোপজাল সিনড্রোম বলে।
লক্ষণগুলো নিম্নরূপ

@ শরীর জ্বালাপোড়া করা
@ মুখ, হাত-পা, তালু গরম হয়ে যাওয়া
@ অসি'রতা
@ হাইপারটেনশন
@ অসি' ক্ষয় হয়ে যাওয়া (অস্টিওপরোসিস)
@ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া ইত্যাদি।
 
মেনোপজ কেন হয়?
বয়স বাড়ার সাথে সাথে ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন হরমোন নিঃসরণকারী গ্রনি' ডিম্বাশয় ধীরে ধীরে সঙ্কুচিত হয় এবং হরমোন নিঃসরণ কমে যায়। হরমোন নিঃসরণ বন্ধ হয়ে গেলে মাসিক বন্ধ হয়ে যায়। এই অবস'াকে মেনোপজ বলে। অনেক সময় ডিম্বনালী কেটে ফেলে দিলে বা ডিম্বাশয়ে সিস্ট হলে বা জরায়ু ফেলে দিলে মাসিক বন্ধ হয়ে যায়। গর্ভধারণ করলেও মাসিক বন্ধ হয়ে যায়।
হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি
হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি বা সংক্ষেপে এইচআরটি বর্তমানে পোস্ট মেনোপজাল রোগীদের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় চিকিৎসা। সাধারণত যে হরমোনের অভাবে লক্ষণগুলো দেখা দেয়, সেই হরমোনগুলো কৃত্রিম উপায়ে শরীরে প্রবেশ করানো হয়। এতে হরমোনের অভাবে যে লক্ষণগুলো দেখা দিয়েছিল তা অনেকাংশে লোপ পায়।
এইচআরটি ব্যবহারের সুবিধা
হরমোন ব্যবহারে দুই ধরনের সুবিধা পাওয়া যায়। একটি তাৎক্ষণিকভাবে এবং অন্যটি দীর্ঘস'ায়ীভাবে।
তাৎক্ষণিক সুবিধা : এর ব্যবহারের ফলে (প্রধানত ইস্ট্রোজেন ব্যবহারে) তাৎক্ষণিকভাবে হাত-পা জ্বালাপোড়া কমে যায়, ঘুমের অনিয়ম কমে যায়, যৌনগ্রনি' বিশেষ করে ডিম্বাশয় এবং স্তনগ্রনি' সঙ্কুচিত হওয়া লোপ পায়, যৌন কর্মক্ষমতা বজায় থাকে, মানসিকভাবে চাঙ্গা ভাব থাকে, টেনশন, বুক ধড়ফড় কমে যায়।
দীর্ঘস'ায়ী সুবিধা : ইস্ট্রোজেন হরমোন দীর্ঘস'ায়ী ব্যবহারের ফলে হৃদরোগের পরিমাণ কমায় (৫০%), জরায়ুর ক্যান্সার কমায় (৭৫%), অন্ত্র ক্যান্সার কমায় (৫০%), অসি'র ক্ষয় রোধ করে। অন্য লক্ষণগুলো কমায়।
এইচআরটি ব্যবহারের অসুবিধা : নিম্নলিখিত অসুবিধাগুলো দেখা যায়- ১. স্তন ক্যান্সার : দীর্ঘ সময় (১০ বছরের বেশি সময়) ব্যবহার করলে। ২. জরায়ুর ক্যান্সার : ইস্ট্রোজেন ১০ বছরের বেশি সময় ব্যবহার করলে জরায়ুর ক্যান্সার হতে পারে। তবে ইস্ট্রোজেনের সাথে পোজেস্টেরন যৌথভাবে ব্যবহার করলে জরায়ুর ক্যান্সার অনেকাংশে হ্রাস পায়।
৩. রক্তনালীতে রক্ত জমাট বাঁধা রোগ বা থ্রম্বো অ্যাম্বোলিক রোগ দেখা দিতে পারে।
৪. ওজন বৃদ্ধি পায়। ৫. মানসিক পরিবর্তন হয়। ৬. পিত্তথলিতে পাথর হয়। ৭. হঠাৎ বন্ধ করলে মাসিকের পথে রক্তক্ষরণ হতে পারে।
কখন এইচআরটি বা হরমোন নিতে হয়?
সাধারণত পোস্ট মেনোপজাল সিনড্রোম দেখা দেয়ার পর হরমোন নেয়া শুরু করতে হয়। হরমোন শুরু করার ১০ বছর পর্যন্ত চালানো যায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সারাজীবনও ব্যবহার করতে হতে পারে।
যে যে হরমোন নিতে হয়
ইস্ট্রোজেন : এটা মুখে খাওয়া যায় বা মাংসপেশিতেও দেয়া যায়। তবে সাধারণত মুখেই খেতে বলা হয়।
প্রোজেস্টেরন : এটা জরায়ুর ক্যান্সার রোধে ইস্ট্রোজেনের সাথে যৌথভাবে ব্যবহার করা হয়।
ফলোআপ 
নতুন একটি ওষুধ খাওয়ার পর বা কোনো নতুন পদ্ধতি গ্রহণ করলে সব সময়ই চিকিৎসকের কাছে নিয়মিত ফলোআপে আসতে হয়। নির্দিষ্ট সময় পরপর ফলোআপে এলে এইচআরটি গ্রহণের ফলে কোনো অসুবিধা হচ্ছে কি না তা বোঝা যায়।
প্রথম ফলোআপ : ওষুধ গ্রহণের চার থেকে ছয় সপ্তাহ পর আসতে হয়। ওষুধ গ্রহণের ফলে কোনো অসুবিধা হচ্ছে কি না তা জানা যায়।
ষাণ্মাসিক ফলোআপ : এ সময় রক্তচাপ দেখা হয়। স্তনে কোনো চাকার মতো আছে কি না দেখা হয়। অন্য কোনো অসুবিধা হচ্ছে কি না তা জানা যায়।
বার্ষিক ফলোআপ : প্যাপ স্মেয়ার বা সারভাইক্যাল সাইটোলজি পরীক্ষা করা হয়। এতে জরায়ুতে কোনো ক্যান্সার জাতীয় কিছু হচ্ছে কি না তা জানা যায়।
দ্বিবার্ষিক ফলোআপ : ম্যামোগ্রাফি করে স্তনের গঠন ও এর চাকাজাতীয় কিছু আছে কি না এবং অন্য কোনো অসুবিধা আছে কি না তা জানা যায়।
এইচআরটি বা হরমোন ব্যবহার করার সময় নিম্নলিখিত বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে :
১. রোগীকে এর গুণাগুণ সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কে বলা দরকার।
২. রোগীকে হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি দেয়ার আগে অবশ্যই তার শরীরে অন্যান্য রোগ আছে কি না, বিশেষ করে রক্তক্ষরণ জাতীয় রোগ আছে কি না তা জানতে হবে।
৩. এসব রোগীর প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে রোগীর মনের মধ্যে কনফিডেন্স তৈরি করতে হবে।
৪. ওষুধের কার্যকারিতা অনেকটাই নির্ভর করে ওষুধের ওপর রোগীর নির্ভরশীলতা বা কনফিডেন্স।
৫. রোগীর রোগ সম্পর্কে ভালোভাবে জেনেশুনে রোগীকে বুঝিয়ে দিতে হবে, যাতে রোগী ভাববে তার ইচ্ছা পূর্ণ হয়েছে।
৬. হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপির কোন পদ্ধতি রোগী ব্যবহার করবেন তা নির্ণয় করবেন গাইনি বিশেষজ্ঞ বা হরমোন বিশেষজ্ঞ। তবে রক্তক্ষরণ কম হয় এমন এইচআরটি ব্যবহার করা যেতে পারে, যেমন টিবোলোন (লিভিয়াল) বা ক্লিজেস্ট।
৭. রোগীকে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা কোথায় কোথায় ব্যবহার করা যাবে না তা বলতে হবে।
৮. অনেক দিন ধরে ব্যবহার করতে হলে ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন একসাথে ব্যবহার করা যেতে পারে।
৯. হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপির কারণে ব্লাড প্রেসার বাড়ে না।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Twitter Bird Gadget